প্রয়োজনীয় তথ্য

কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য

কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য

কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য: বাংলাদেশের প্রথম নদী তলদেশীয় সড়ক সুড়ঙ্গ

আজ আমরা কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করব।  কর্ণফুলী টানেল, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও ব্যতিক্রমধর্মী অবকাঠামো প্রকল্প। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেলটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নদী তলদেশীয় সড়ক সুড়ঙ্গ এবং প্রযুক্তিগত ও স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য উদাহরণ।


টানেলের অবস্থান ও নির্মাণের পটভূমি

কর্ণফুলী টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর অংশে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হয়ে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারা উপজেলায় শেষ হয়েছে। টানেলটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে সংযুক্ত করে, যা দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ ও দ্রুত করেছে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং। টানেল নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।


কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য: প্রকল্পের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

  • দৈর্ঘ্য: কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার।
  • সংযোগ সড়ক: টানেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৫.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক।
  • গভীরতা: নদীর তলদেশ থেকে টানেলটি ১৫০ ফুট গভীরে অবস্থিত।
  • টিউবের সংখ্যা: টানেলে দুটি আলাদা টিউব রয়েছে, যা যানবাহনের পৃথক চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি টিউবের প্রস্থ ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ১৬ ফুট।
  • টিউবের মধ্যবর্তী দূরত্ব: দুটি টিউবের মধ্যে ১১ মিটার ব্যবধান রয়েছে।

নির্মাণে ব্যবহৃত প্রযুক্তি

টানেল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (CCCC) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। চীনে টানেলের বিভিন্ন অংশ উত্পাদন করে বাংলাদেশে আনা হয় এবং সেগুলো এখানে সংযোজন করা হয়।


অর্থায়ন ও খরচ

এই প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ১০,৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে ৫,৯১৩ কোটি টাকা সরবরাহ করেছে। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার বহন করেছে। চীনের সঙ্গে এই ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০১৫ সালে।


কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য

কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য: যানবাহনের টোল হার

টানেলে যানবাহনের চলাচলের জন্য নির্ধারিত টোল হার নিম্নরূপ:

যানবাহনের ধরন টোল হার (টাকা)
ব্যক্তিগত গাড়ি এবং পিকআপ ট্রাক ২০০
মাইক্রোবাস ২৫০
ছোট বাস (<৩১ আসন) ৩০০
বড় বাস (৩২ আসন বা তার বেশি) ৪০০
বড় ট্রাক (৫ টন) ৪০০
বড় ট্রাক (৮ টন) ৫০০
ত্রিএক্সএল ট্রেলার ৮০০

সুড়ঙ্গের উপযোগিতা

১. যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতকরণ: কর্ণফুলী টানেল চট্টগ্রাম শহর এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে। এটি ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়ককে আরও কার্যকর করেছে। ২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: এই টানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্প ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। ৩. যানজট নিরসন: কর্ণফুলী নদীতে ফেরি সার্ভিসের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিয়ে সময় সাশ্রয় করেছে। ৪. পর্যটন: কক্সবাজার ও বান্দরবানের পর্যটকদের জন্য এই টানেল একটি দ্রুতগামী রুট সরবরাহ করেছে।


কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য: চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা

এই কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল।

নির্মাণ বিলম্ব, ব্যয় বৃদ্ধি, এবং যানবাহনের প্রত্যাশিত সংখ্যা না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি দেখা দিয়েছে।

প্রথম বছরের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বিশাল পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।


কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য: আর্থিক ক্ষতি

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী টানেল চালুর পর প্রথম বছরে গড়ে ৩,৯১০টি যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করেছে, যা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম।

এর ফলে দৈনিক গড় আয় ১০.৩৭ লাখ টাকা হলেও পরিচালন ব্যয় ৩৭.৪৭ লাখ টাকা, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চাপ বাড়িয়েছে।


কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

কর্ণফুলী টানেলের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • টোল নীতিমালা পুনর্বিবেচনা।
  • টানেলের ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করা।
  • যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন।

উপসংহার

কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

এর সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে এর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন অপরিহার্য।

কর্ণফুলী টানেল বিস্তারিত তথ্য” শীর্ষক এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়ার একটি মাইলফলক প্রকল্প।

আরো জানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *